আজ ৮ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সংগৃহীত ছবি

সূরা ইয়াসিনকে কুরআনের হৃৎপিণ্ড কেন বলেছিলেন মহানবী (স.) জেনে নিন


অনলাইন ডেস্কঃ সুরা ইয়াসিন পবিত্র কুরআনের ৩৬তম সুরা। এটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়। এর ৫ রুকু, ৮৩ আয়াত। প্রথম দুটি অক্ষর থেকে এই সুরাটির নাম। মহানবী (স.) এই সুরাকে পবিত্র কুরআনের হৃৎপিণ্ড বলে বর্ণনা করেছেন। আল্লাহর একত্ব ও মহানবী (স.)-এর রিসালাত সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। অংশীবাদের সমালোচনা, পৌত্তলিকদের অমরতা, অবিশ্বাসীদের কূটতর্কের উল্লেখ করে ইসলামের সত্যতা ও কিয়ামতের পুনরুত্থানের বর্ণনা রয়েছে। মহানবী (স.) বলেন, যে ব্যক্তি নিয়মিত এই সুরা পাঠ করবে তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা উন্মুক্ত থাকবে। রোদ-তাপ ও বিপদ-আপদ নিরসন, মুমূর্ষু ব্যক্তির মৃত্যুযন্ত্রণা লাঘব এবং মৃত ব্যক্তির শান্তির জন্য তার কবরের পাশে এ সুরা পাঠ করা হয়।

শান্তিপূর্ণ মৃত্যুর জন্য এ সুরাটি অনেকে পড়ে থাকেন। এ সুরা আমল করার মধ্যে রয়েছে প্রকৃত পূণ্য। সুরার শুরুতে আল্লাহ রাসুল (স.) রিসালাতের সত্যতার ব্যাপারে কুরআনে শপথ করেছেন। এরপর কুরাইশ কাফেরের আলোচনা করা হয়েছে। যেখানে কুফর ও গোমরাহ এর বিষয়ে জানানো হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেছেন, যারা কুফর ও গোমরাহ করত, তাদের জন্য রয়েছে শাস্তি। এরপর এক জনপদের আলোচনা করা হয়েছে, যেখানে তিনজন নবীকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার একটি ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ সেই জনপদের হেদায়েতের জন্য নবী পাঠানো সত্ত্বেও তারা হেদায়েতের পথে চলেনি। তারা একে একে তিনজন নবীকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করেছিলো। তখন এক ব্যক্তি দৌড়ে সে সম্প্রদায়ের লোকদের কাছে আসেন। মুফাসসিররা বলেন, তার নাম ছিলো হাবিবে নাজ্জার। তিনি বলেন, নবীদের পীড়ন করলে আল্লাহর আজাব নেমে আসতে পারে। তিনি তার সম্প্রদায়কে সতর্ক করে তাদের নবীদের অনুসরণ করার পরামর্শ দেন। এরপর সবার সামনে নিজের ইমান আনার ঘোষণা দিলে সবাই তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে হত্যা করে। মৃত্যুর পর তিনি জান্নাতে প্রবেশ করেন।

আরও পড়ুন মানসিক অস্থিরতা কাটানোর কিছু আমল

আল্লাহর প্রতিশ্রুত জান্নাতের নেয়ামত প্রত্যক্ষ করার সুযোগ পাওয়ার পর তার মুখ থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বেরিয়ে আসে, আল্লাহ যে আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। আমাকে সম্মানিত ও সৌভাগ্যবান করেছেন, আমার সম্প্রদায় যদি তা জানত! (তাফসিরে ইবনে কাসির)

আল্লাহর অস্তিত্ব, একত্ব এবং সৃষ্টির বিষয় কুরআনে উল্লেখ হয়েছে। বৃষ্টি ঝরিয়ে মাটিকে সতেজ রাখা, দিন–রাত ও চন্দ্র-সূর্যের অস্তিত্ব, সমুদ্রে চলাচলরত জাহাজ ও নৌকা ইত্যাদি জাগতিক সচলতা হিসাবে আল্লাহ্‌ যেসব নিয়ামত দিয়েছেন, তার বিবরণ এতে রয়েছে। এ সুরার বিষয়বস্তু: মৃত্যুর পর পুনরুত্থান। এ সুরায় বলা হয়েছে, ‘আমি মৃতকে জীবিত করি আর লিখে রাখি ওরা যা পাঠায় ও ওদের যে পায়ের চিহ্ন রেখে যায়। এক সুস্পস্ট গ্রন্থে আমি সব সংরক্ষণ করে রেখেছি।’ (আয়াত: ১২)

নবীদের প্রতি যারা ইমান এনেছে এবং নবীদের যারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করতে চেয়েছে—উভয় দলের দৃষ্টান্ত উপস্থাপন এবং তাদের প্রতিদানও এতে বর্ণনা করা হয়েছে। যুক্তি দিয়ে এতে মৃত্যুর পর পুনরুত্থানের বর্ণনা করা হয়েছে। সুরা ইয়াসিনে রয়েছে মুমিন ও কাফিরদের প্রতি প্রতিদানের কথা এবং জাগতিক নিদর্শন নিয়ে চিন্তা করে আল্লাহ যে একত্ব ও অদ্বিতীয় তার নিশ্চয়তা বিধান। যে রসুলদের প্রতি ইমান আনে এবং তাদের সত্যায়ন করে, সে স্বজাতিকে আল্লাহর পথে আহ্বান করে এবং জীবনে-মরণে তাদের কল্যাণ কামনা করে। বিশ্বাসীরা আরেক বিশ্বাসীতে সহায়তা করে। একে অপরের মাধ্যমে শক্তিশালী হয়। বিশ্বজগতের সৃষ্টি, বিন্যাস ও শৃঙ্খলা অবিশ্বাস্য সূক্ষ্ম ও নিখুঁত। এর উদাহরণ অগণিত। এমন সময় কিয়ামত এসে হানা দেবে, যখন মানুষ বাজারে কেনাকাটার মতো দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় ব্যস্ত থাকবে। কুরআন থেকে কেবল জীবিতরাই উপকৃত হতে পারে।

লেখক: ফেরদৌস ফয়সাল
তথ্যসূত্র: প্রথমআলো


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর